Thursday, 21 December 2017

সম্পাদকীয়

                                                            দ্বিতীয় ব্লগ সংখ্যা
                                                             ডিসেম্বর, ২০১৭



ডিসেম্বর মাস মানেই এক সাহিত্যের মরশুমি সূচনা। একদিকে রিক্ততা, পাতা ঝরে যাওয়ার বিষাদ, আরেকদিকে মিলনের গাঢ় সমাচার। এই নিয়েই কলকাতা আর বাংলা বেশ মশগুল হয়ে আছে। থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ আমাদের এই কিছু না পাওয়ার সময়ে কাজের সঙ্গে আমরা যে একে  অপরের সাথে বেঁধে বেঁধে আছি, তা মনে হয় দেখানোর আর বলার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তাই বলে এত?  মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলা থেকে নিজস্ব নির্জনতা হারিয়ে যাবে না তো? তবু, তীব্র বিচ্ছিন্নতার থেকে মিলন অনেক ভাল। আর তার মধ্যেই অনেক ভাল ভাল কাজের সন্ধান পাওয়া যায়।
যেমন কবিতা আশ্রমের সৌজন্যে আমরা পেয়ে যাই অনেক তরুণ কবির কবিতা। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শক্তিশালী সেই সব লেখনী এখন আমাদের কাছে চলে আসে। আমরা পড়তে পারি, জানতে পারি। আর অনুভব করতে পারি, এই কলকাতা শহরে এখন সাহিত্যের ভরকেন্দ্র নেই। কোনোকালেই ছিল না সম্ভবত। এই ভুবনায়নের পরবর্তী সময়ে, ভাষার ক্রম-অবনমনের আর  সংস্কৃতির ক্রম-সংকরায়নের পরে এই কলকাতাতেই কজন এখন সাহিত্যের পাঠক, তা নিয়ে সংশয় আছে। আর কে না জানে, সাহিত্যের ভাল পাঠক না হলে তার কাছ থেকে নতুন সৃষ্টির গভীর গভীরতম নির্জনতাও আশা করা যায় না। বাংলা কবিতা, কবিতা আশ্রমের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
ঠিক এক রকম ভাবে, আমাদের সকলের চেষ্টা করা উচিত, এক সুস্থ আবহ তৈরি করা। এক প্রবল অসহিষ্ণুতার আবহাওয়া চারিদিকে। এই অসহিষ্ণুতার প্রভাব সবকিছুর ওপরেই পড়ছে। সৃষ্টিশীলতার উপরে তো বটেই। আমাদের বেঁচে থাকার উপরেও । অধর্ম-ব্যবসায়ীরা ধর্মকে ক্ষমতার হাতিয়ার করে যেমন সারা দেশে অসহিষ্ণুতার আবহ তৈরি করেছে, তেমন ভাবেই তীব্র অবক্ষয় হয়েছে আমাদের নৈতিকতার। চারপাশের ঘটনা দেখে, শুনে মনে হয় মানুষ কি ক্রমশ জন্তুতে পরিণত হতে চলেছে? এই সব অসুখগুলি যে ভোগবাদের, ব্যক্তিবাদের, তা নিয়ে যারা অনুভূতিশীল, তাদের মনে দ্বিধা থাকার কথা নয়। সেই ভুবনায়নের সূচনা যে সাংস্কৃতিক- রাজনৈতিক- অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ তৈরি করে সারা বিশ্বেই তীব্র চিন্তা ও চেতনাগত অবক্ষয় তৈরি করেছে, আজ সার্বিক ভাবে মানুষের সব বিষয়েই প্রবৃত্তি-কেন্দ্রিকতা, অসহিষ্ণুতা সেই দিকেই আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু এই মারণরোগ সদৃশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইটাও খুব কঠিন। কারণ খুব সূক্ষ্ম ভাবে আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভাবে মিশে গেছে এই বিষ, আমরা সহজে এর থেকে মুক্তি পাব বলে তো মনে হয় না।
তাহলে কী করতে পারি আমরা? হাত গুটিয়ে বসে থাকব? মানব সমাজ যখন পুড়বে, তখন আমরা প্রেমের কবিতার বেহালা বাজাব?

অসুন্দর সময়ে সুন্দর থাকাটাও এক ধরনের প্রতিবাদ। যে অসুস্থ হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, তার বিপরীত স্রোতগুলিকে তুলে ধরাই হোক আমাদের প্রতিবাদ, আমাদের প্রতিরোধ। 

আবহমানের পক্ষে -

হিন্দোল ভট্টাচার্য                              মণিশংকর বিশ্বাস
শ্যামল ভট্টাচার্য                                বেবী সাউ



No comments:

Post a Comment