কবিতা
জন্মান্তরবোধ
এক।
একেকটি আসা, চলে যাওয়ার গন্ধ নিয়েই আসে। তাকেই আত্মীয় সাজিয়ে বসি। বলি, কেমন আছে ঘরবাড়ি? দুপুরের সিঁড়ি! বিস্তারিত ইতিকথা! চুপচাপ শোনে, হুঁ-হ্যাঁ করে আর বেরিয়ে যাওয়া খোঁজে... ওই দিগন্তহীনতার দিকে...মরীচিকায় খোয়া যাওয়া উটের চোখ...
নির্জন! এক বসত আলো ধরে
শীতের দেশে ফেরার গানে শোক
হঠাৎ করে বেজার মুখে দেখো
হাত পেতেছে জমিয়ে রাখা রোদ
ওপারে ওই নৌকো ভাসা জলে
মেঘের কোন গল্প লেখে যারা
নবাবি চালে তারাই যেন আজ
সকাল জুড়ে কষ্টে দিশেহারা
আমিও তুমি শীত লুকোনো ছলে
পদ্য লিখি নিয়ম মত রাতে
রোজ দুবেলা...
দুই।
এইসব ইচ্ছেমৃত্যু। মোমবাতির আলোয় পেতে ধরি হিসেব। চোদ্দ আনা। দু পয়সা মুড়ে দিই পাখির ডানায়। দোটানার স্বর। মিহি গান। জবাফুলে ফুটে ওঠা টকটকে সাঁজি পান। চুন খয়ের... নাও, এবার চিত্রশিল্প সাজাও...
সহস্র বছর পোষা আমাদের এই যাত্রাপথ
বাঁকালিচু গাছে ঝুলে আছে সেই প্রাচীন শতাব্দী
ডালে ডালে তার জন্মমৃত্যুশোক; মন্বন্তর
পাতায় পাতায় লেগে প্রসূতির ঋতু; ওই পাণ্ডুরবর্ণ টুকু বাদ দিলে
আর কিছু পড়ে নেই আপাতত
তিন।
ভাসানের আয়োজন সারা। তুমি নেমে যাচ্ছ জলে, উপরে কুমীর। একবার ধুয়ে ফেলছি জমানো আলতা; শীতার্ত ডাঙাতে বাঘের রক্ত। কর্কশ; মৃদু অথচ ঝাঁপিয়ে ওঠা বাষ্প চারদিকে। কেউ নেই অথচ বিরাট এক সত্য ছিল থাকা... তখনই ... চব্বিশটি বসন্ত হাঁটে... অলিগলি খুঁজে নিয়মিত হয় যাপন।
জাতিগতভাবে প্রকট হচ্ছি আরও
একপাশে জমে ওঠা চিতাকাঠ
থামতে থামতে পদাবলী লিখছে
লিখতে লিখতে থামছে ইহজন্ম
উনুনের গন্ধে মিশিয়ে ফেলছে শিখণ্ডী আওয়াজ
রাগ ছেড়ে দাহকালের মণ্ডপ
সরগম পেতেছে
বাজনাদার মহুলবনে লিখেছে হালকা ঘুঙুর
নীল আলো
চার।
একটা আলো। একটাই গান। তারপর ঘুম...তারপর কুয়াশাবন... কে তাকে কখন কাঁচাঘুম থেকে ডেকে তোলে...কে তাকে সোহাগের গল্প শেখায়...
ঝড়বৃষ্টির রাতে বের করি পুরোনো পুঁথি
ভিজে ওঠে চেনা কৃষিকাজ
হেমন্তেরবন
একদিকে ময়ালের শব্দ ঘন হয়
অর্জুনের বাকলে লেখে শোকগাথা
সমস্ত বিশেষ্য হারিয়ে
সেও গমন অভিলাষী
শীর্তাত ফলকে রুহ কেঁদে ওঠে
পাঁচ।
চতুর্থ শিখেছে পাঠ। শ্লেটে অজগর প্র্যাকটিস করে। ইঁদুর। বাঘছালে পদ্মও লেখে। মন্দের মরশুমে, মা তাকে ভাঙা খড়ি দেয়। অক্ষরে সাদা বরফের গুঁড়ো। লালটুপি সান্তা আসবে ভেবে ফ্যানাভাতে নিজেকে জাগায় রোজ।
সন্ধের বাঁধন ভেঙে তুমি রোজ করতল পাতো
ফকিরের গানে মেশাও আতপের চাল
ভ্রমণ হাঁটে একা একা
দিগন্তের মত
মানত সহায় হলে
ক্ষিদে ভাবে শুধু -- দুধভাত... দুধভাত...
ছয়।
তুমিও বসত ভেঙে ফেল। কাদামাটিতে ছুঁড়ে দাও মৃত শস্যের বীজ। গড়িয়ে গড়িয়ে ভাত বাড়ে। পুরনো চাল। জড়ত্ব ঘোচে। রাতের ইয়ক ভ্রমণে বেরোয়--- অতঃপর।
দাগের ওপরে দাগ কাটি
ক'ঘর কুরুশে ঢেকে যায় শীত
মেষ পালকের গান আগুন পোহায়
গতজন্ম নিচু স্বরে ডাকে
কুশল পীড়ায়
নিভৃত বিচ্ছেদ
ঘুমচোখে ঘরে ফেরে সাবলীল
ভাল লেখা। ফন্টের পরিবর্তন কি পরীক্ষামূলক?
ReplyDelete