কবিতাগুচ্ছ
ই ন্দ্র নী ল চ ক্র ব র্তী
শ্বাসরোধ পর্ব
(১)
থেমে যাচ্ছে যে
সে আমার সম্পূর্ণ নিজের নয়।
চুলের ভিতর স্পষ্ট একরোখা ছাপ।
একটানা দৃষ্টির ভিতর যেমন
আকার সমস্ত কিছুই রেখে
দিচ্ছে, তুমি তেমন নও।
না চোখের দেখায়
ঘন সন্নিবদ্ধতা গড়ে ওঠে
পরস্পর শরীরে।
একই রকম অদূরে
খাবারের গায়ে জিব বসানো।
নিশ্বাস টেনে নিচ্ছে অথচ
শরীর প্রতিমুহূর্ত আটচালা বেঁধে।
সব কিছুর অবসানে
একটা সমাপ্তি প্রিয়তা চাইছে বলে।
(২)
গন্তব্যে দু চোখ যেখানে যাও, অতঃপর
চলচিত্র জীবন গুলো
দুচোখ ভরে দাঁড়ায়,
বলে, 'এখান থেকে শুরু কর।'
শুরু করেছি হয়তো অতর্কিতে,
গোপন আঁকিবুঁকিতে।
শুরু করা, শেষ করা
স্ব-প্রজন্ন ভঙ্গি।
পৃথিবী বদলে যাচ্ছে ক্রমশ
হয়ে যাচ্ছে অচলায়তন,
একপাশে মাতৃদুগ্ধ, অন্যপাশে স্তন।
(৩)
আমাদের যে কথা
তার জন্য যুধিষ্ঠির হইনি,
চাকা একপ্রকারই আছে।
প্রতিটি মাছের চোখে
তীর না লাগলেও
বুদবুদ শব্দ,
পালক শব্দ শুনে
কেউ কেউ দেখে নিচ্ছে
হাত শিরা সোজা না,
তেরছা ভাবেই কাটা।
(৪)
হারিয়ে যাওয়া নামে
ছোটবেলায় যে মেলা গুলোয় গেছি-
এখন হারাই না।
আমারই সঙ্গে এসে ভিড় করে, আর
শব্দ টেনে তোলে শব্দ।
জিলিপি, ঠোঙা,
তেলেভাজা, নাগরদোলা।
সীমানা লোপাট করা- আধুনিকতায় আমি
চিৎকার করে বলছি
এখনও পিকনিক বসে , আর
আমরা গিটার,
বই সঙ্গে নিয়ে যাই।
(৫)
একটা প্রকাণ্ড পাথর
বসিয়েছিলাম ঘরে;
থেমে থাকা নয়, ভিতরে বাসা
করেছিল মুহূর্ত।
সেগুলো ক্রমে ক্রমে
নির্মাণ পর্বের অন্তিম লগ্নে
সারনাথ, অজন্তা,
কোনারক
ইত্যাদি ইতিহাস মেনে
ক্রমশ বিরোধহীন হল।
(৬)
তোদের শরীরে যত যত চোখ
তুলে রেখেছি এক এক করে
ডায়েরির গোপন পাতায়।
বসন্তের আগে এসেছে উপস্থিতি
অসতর্ক স্বল্পতা ও বিন্যাস।
ভিক্ষুক কালে বুঝেছি
কাঙ্ক্ষিত শব্দের অর্থ সমুদ্র,
আর আকাশ ভেবে উড়িয়ে দিয়েছি
এক একটি যোনিমুখ।
(৭)
তুমি বরঞ্চ কথা বল
যত্ন আত্তি করে তুলে রাখা সময়।
শোক স্পৃহা মোছে না
আকাশ পাতাল দিয়ে
এই ঘর আমার বাস।
এই খানেই প্রস্তর খণ্ডিত,
বর্ণিত , নির্মিত।
হাহাকার রণে তুলে রেখেছি
রোজ একবার মনে রাখার অভ্যাস।
(৮)
চুপচুপ আমি বুঝেছি
মাথা নামায় ইচ্ছে
গায়ে উড়তে থাকে মগ্নতা,
কিয়দাংশ স্রোত।
রাস্তায়, ভিড়ে,
শব বহন করছে,
শব্দযান চলছে অসীমে, নিখিলে
অন্তর যাত্রা।
না হন্যতে
- মুসাফির আত্মার
ঐকান্তিক বিরোধিতা।
(৯)
অর্থাৎ – যেটুকু লুকোতে চাইছি
সেটা কোনও নতুন মহাকাশ নয়,
পালিয়ে বেড়ানো উজ্জ্বল শীতলতাও নয়,
তার নিজস্ব অস্তিত্ব টানে টানটান।
এ সমস্ত সহজ ছিলায়
মাত্রারিক্ত আকাশের দিকে
তাক করা আছে এটুকু স্ব-হনন পদ্ধতি।
(১০)
গভীর চলনে
বাতাসের ঢাল নেমে গিয়েছিল
তীব্র অবশ্যম্ভাবী ছায়ায়।
মনের দুচারটি কথা
এমনি একটা নিথর তাপমাত্রায়
ভাসত।
আর যে সৃষ্টির আদিমতম খাবারের আগে
দু চারটি শরীর বসিয়েছিল
তাদের অভিলিপ্সায় মনে করি , কি ভাবে
এক একটি দীর্ঘ জীবনের সায়াহ্নে
মস্তিষ্ক টুকুও কোনও রকম
প্রক্রিয়ার ওপারে চলে যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment