কবিতাগুচ্ছ
তন্ময়
চট্টোপাধ্যায়
নীল
সূর্য
আঙুলে
বিষ
মেখে
কতবার
বেড়েছ
ভাত
তালুতে
বিষ
লেপে
বাড়িয়ে
দিয়েছ
হাত করমর্দনে,
কলসির
জলে
মিশিয়ে
রেখে
দিয়েছ
ঘরের
কোণে
প্রচন্ড
গ্রীষ্মে
ঠোঁটে
করে
নিয়ে
গিয়ে
ফেলেছ
বিশ্বাসী
জিহ্বায়!
বুক
ভর্তি
সেঁকো
বিষ
নিয়ে
জড়িয়ে
ধরেছ
প্রচন্ড
আলিঙ্গনে
তুমি
আলোয়
মিশিয়েছ
বিষ,
ধোঁয়া
দিয়ে
বাতাসে...
আর
তিরতির
কাঁপতে
কাঁপতে
দেহ
গুলো
ডুবে
গেছে
অস্তে
প্রতি
গোধূলিতে,
তুমি
দিগন্তে
শুয়ে
হাসতে
হাসতে
শুধু
অভিবাদন
কুড়িয়েছো।
আজ
হঠাৎ
তোমার
চিৎকার,
নিজেই
ঢুকে
যাচ্ছো
গর্ভে
মাটি
খুঁড়ে
খুঁড়ে
আজ
যে
একটা
নীল
সূর্য
উঠেছে
আকাশ
জুড়ে...
জঙ্গল
তেতাল্লিশ তলার ফ্ল্যাট। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢুকি। দেখি গাছেদের গুড়িঁ।
ভেসে যাওয়া দিনে বোজাই চোখ। কাঠঠোকরা উড়ে যায়। ঘুরি-
দেখি সবুজ সতেজ আধাঁর, টাটকা ফ্রেমে মৌমাছিদের সংসার।
শিকড়ের আলিঙ্গনে শক্ত মাটি। গন্ধে মাতোয়ারা জঙ্গল। অচেনা গল্পকার-
গাছেদের কবি। দীর্ঘাকার ছায়ার তলায় ক্লান্তিতে ঘুমোয় মানব।
কলকল করে বয়ে চলেছে বনানী। আরণ্যক ভালবাসা। বাতাসের রব....
ধরা দিচ্ছে মেঘ মাটির কোলে আনন্দে, ঝরে পড়ছে সবুজ জল।
পৃথিবী খোঁজে স্তন্য, মুখ লাগায় মৃত্তিকার বুকে। অরণ্যের ছল-
গায়ে মেখে নাচে ময়ূর। টানটান হয়ে যাচ্ছে শিরা।
বটের ঝুরি বেয়ে নেমে আসছে সভ্যতা। আকাশে গান, সাজানো অন্তরা।
বেয়ে উঠছে বনবেড়ালফিঙেদোয়েল সর্পিল মানবমানবী জঙ্গলের পিঠ,
টুপ করে জল পড়ল চোখে- উপরে দেখি চিলার ইউনিট!
দেখি মাথার উপর গম্বুজ, পাইপ। হারানো দিন ফিকে হয়ে আসে,
যা কিছু রত্ন তোমার “জঙ্গল” ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেছে আকাশে.....
পাহাড়
পাহাড়ে রঙ এসে লাগে, আকাশ থেকে নামে।
যতবার মুখ উঁচিয়েছি সে রঙ মাখতে
ততবারই গাছেরা জেতে
চূড়া থেকে শব্দ গড়িয়ে মাঝরাস্তায় থামে
তোমারই বুকে অক্ষর, মহাকাব্য, আশ্রম।
স্তব্ধ চলাচল। এ ও উঁকিঝুঁকি মারে,
তারপর শব্দ গড়িয়ে পরে খরস্রোতায়
নদীতে মিশে বয়ে যায়, ফসল ফলায়
আমি জুবুস্থুবু বসে থাকি খাদের ধারে
তোমার বিশালত্বের কাছে আমার চলে না কলম।
দু’পাহাড় মাঝে দড়ি, সদ্যকাচা কবিতা ঝোলে ফুরিয়ে যাওয়া দামে
শুকিয়ে গেলে উড়ে পড়বে কোন উঁচু হওয়া মুখে, দিক ভুলে
সেও তো তোমারই কোল। কেউ তুলে-
পড়তে বসবে টিমটিমে আলোয় কোন গ্রামে।
তোমার রঙ লেগে বিগত দিনও ধূসর, ভ্রম।
খাঁজে খাঁজে গ্রন্থ। পড়ে উঠি। সূর্যও গড়িয়ে পড়ে পাতায়,
ঢালু পথ ধরে অরণ্যের ঘ্রাণ উঠে আসে হাওয়ায়
শ্রেণী, ফাটল এড়িয়ে লিপির কাছে যাওয়া
তারা ফোটে। যখন খসে, তখনই নেমে আসে খাতায়।
খাতা পড়ে আছে তোমারই পাদদেশে আমার যা কিছু লেখা, পন্ডশ্রম...
বোতাম
একদিন সারারাত বৃষ্টি। আকাশ নেমে এসেছে পাহাড়ের বুকে
সকালে উঠে দেখেছিলাম, একখানা মেঘ আটকে পাহাড়ের জামার বোতামে।
আস্তে আস্তে উঠে কোল ধরে,
খুলে দিয়েছিলাম মেঘ,
সেও উড়ে গিয়েছিল..
হাতে ছিঁড়ে এসেছিল জামার বোতাম,
সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম।
সেই বোতাম আমি জামায় লাগিয়েছি কিছুদিন হল,
সেই জামা পড়ে অফিস যাই রাস্তায় বেরোই কেচে মেলে দি'
আকাশের নীচে।
সেই জামা পড়ে ঘুমিয়েও পড়ি,
শুধু রাতে দেখি সেই মেঘ চোখ ভর্তি জল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চারপাশে,
আর গুমরে কেঁদে
বুক ভিজিয়ে দিচ্ছে
ভোররাত্রে...
No comments:
Post a Comment