দুটি কবিতা
রুদ্র-বৈশাখী
হে রুদ্র, তোমাকে ভালোবাসি—
তোমার প্রখর লেলিহান তেজরাশি
আমাকে সুসিদ্ধ করে— তোমার নিদাঘ
আমাকে দীক্ষিত করে দহনে, সৌন্দর্য্য চেতনায়।
হলুদ-বেগুনি-লাল পাপড়ি ঝরে থাকা যে-রাস্তায়
যাতায়াত করে ফেরিওয়ালা…
গলার টাইয়ের ফাঁসে আটকে যাওয়া ঘেমো সেলসম্যান…
স্বর্গের ধারণা পায় সেই পথে, স্পষ্ট,
সাময়িক।
গাছের আত্মায় যে-নিঝুম শান্তি আছে,
কোকিল, দাঁড়কাক, কুবোপাখি ও ডাহুক আছে,
ফুলের, বীজের, যে-রহস্য,
যে তাগিদ…
সেই ছায়া, সে বিস্ময়, সেই প্রজ্ঞা প্রদাহে
তোমার।
সন্ধ্যার বাতাসে তুমি যে সমুদ্র বয়ে নিয়ে
আসো
জন্মের ওপার থেকে উঠে আসে বজ্রশূলধারী
সে কাল ভৈরব—
প্রাসাদের জানলা থেকে নয়;
ঝড়ের ঠোঙার মতো
উড়ে যাওয়া সংসারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে
পেয়েছি সে রূপে আমি সৌন্দর্য্যের দিব্য
সংস্কার;
সেই দীক্ষা আমার শৈশব।
খর-জ্যৈষ্ঠ-কথা
তাপ যত খর হয়,
ফল মিষ্টতর হয় তত।
ময়দানের তপ্ত রেডরোডে,
কিংবা কোনো
রাঙামাটি-গোঠে,
অনেক হাঁটার পর
উপযুক্ত ছায়া খুঁজে
পাওয়া
মানুষ সে-কথা টের পায়।
পিচের রাস্তায় ওঠে তরঙ্গ
তাপের;
তারই বুকে অকাতর ঝরে পড়ে
ফুল
রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া,
শিরীষ জারুল...
শ্বাসরুদ্ধ যানজটেও
কখন আনমনা হয় মুগ্ধ
প্যাসেঞ্জার।
তাপ যত খর হয়
ফল মিষ্টতর হয় তত।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত
বাবু-বিবিদের জন্মে
এ-বিদ্যার সারবত্তা নেই।
তাহাদের জ্যৈষ্ঠমাস
দাবি রাখে শুধু গাছ-পাকা
আম-কাঁঠাল-বাতাবি-লিচুর...
ফ্রিজের সব্জির মতো
তাহারা কাঁচাই থাকবে যেন
চিরকাল;
মগজও পাকে না তাই তাহাদের
কিছু।
পোড়া মানুষের তপ্ত দেহ
তপ্ত শ্বাস
সন্ধ্যায় শুশ্রুষা করে
প্রকৃতি স্বয়ং।
বৃষ্টি নেমে আসে-- ওঠে হাওয়া
ছোটে বাষ্পীভূত বাতাসের
পিছু পিছু।
No comments:
Post a Comment