Saturday, 23 December 2017

বেবী সাউ



 দোলনা

ক্যাঁচ করে শব্দ হল। জংধরা। তারপর আস্তে আস্তে দরজাটা খুলে গেল। চুপচাপ, চোখে চোখে কিছু কথা বলে নিলাম, দীপের সঙ্গে। দরজার ওপাশে ভদ্রমহিলা। বিরক্তি নাকি বিস্মিত-- কিছু বোঝা যাচ্ছে না। চিনি না। এখানে যে একজন স্ত্রীলোক থাকেন, আজ দুপুরের আগে, জানতামও না। 
---আসুন
---এখন পরিস্থিতি কেমন? দীপ বলল। 
---আসুন। 
প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে দীপঙ্কর আমার দিকে তাকাল। চোখের ইশারাতে আমি ওকে থামতে বললাম। 

ইতস্তত ছড়িয়ে আছে বোধ এবং বোধির চিত্র। বেতের সোফার ওপর কয়েকটি সাদা পৃষ্ঠা দুমড়ানো-মুচড়ানো। কিছু একটা লেখার চেষ্টা করা হয়েছে।বোঝা যাচ্ছে। দেওয়ালে বিরাট তৈলচিত্র। ঘোড়ার। স্থির, দাঁড়িয়ে থাকা
--- বসুন। আমাদের দিকে না তাকিয়ে ভদ্রমহিলা বললেন
--- কি এখনও ঘুমোচ্ছে? থাকতে না পেরে প্রশ্নটা আমিই করলাম। 
---বসুন। 



দ্বিতীয়বার কোন প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আমরা ফের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলাম। মনেহলভদ্রমহিলা নিজের মনে হাঁটছেন। কথা বলছেন। একটা ঘোরের মধ্যে। বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন আবার তাও নয়। অথচ, ফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডাকলেন। খুব বিধ্বস্ত লাগছিল,ফোনে, বিকাশের কথা ভেবে যেন তাড়াতাড়ি পৌঁছাই রিকোয়েস্ট করলেন

অস্থির হয়ে 
---আমি দীপঙ্কর। আর প্রণব।  আমার দিকে আঙুল দেখিয়ে দীপঙ্কর বলল। 
--- আচ্ছা, আপনি ফোনে ঠিক কি বলতে চাইছিলেন? আমি বললাম

চুপ

--- বিকাশ কোথায়? ঘুমোচ্ছে? আপনার কথা তো কখনও শুনিনি! আই মিন বিকাশও কিছু বলেনি আমাদের!

কোন উত্তর নেই। গোধূলি ভেঙে সন্ধে নেমে এসেছে ততক্ষণে। চারপাশটা কেমন একটা মেরে আছে। অফিসফেরত আমার মধ্যে যে খিদেটা জেগে ওঠেছিল ওটাও আর অনুভব হচ্ছেনা। 

ভদ্রমহিলা মধ্যবয়স্ক। হাতের আঙুলে পাঁচ ক্যারেটের রক্তপ্রবাল। সুন্দরী। লম্বা চুল। হালকা ঘিয়ে রঙের শাড়ীর গোল্ডেন পাড়। রঙ ফর্সা! নাকি ফ্যাকাসে

কোন উত্তর না পেয়ে আমি এবং দীপ উঠে দাঁড়ালাম। একটু একটু শীত শীত লাগছে। ভদ্রমহিলা আমাদের দিকে একবারও তাকালেন না। ঝুনঝুন করে তাঁর চুড়ি বেজে উঠল। মনে হল, প্রাচীন একটা স্থির প্রদীপের শিখা যেমন ওঠাবসার শব্দে মৃদু কেঁপে ওঠে।তারপর রক্তপ্রবালের আঙুল নির্দেশ করছে সিঁড়ির দিকে সিলিং এর ওপর। আমরা দেখছি দুটি পায়ের পাতা। বিকাশের। দোল খাচ্ছে। দুলছে


No comments:

Post a Comment