Wednesday 20 December 2017

বিকাশকুমার সরকার


কবিতাগুচ্ছ

বিকাশকুমার সরকার

অসমীচীন হরণের নকশা


সংযমে ভুলে যেতে বসেছি আমি জীব
যে কোনও মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার তাও ধরেছি জিদ
সেই সুযোগে যতখুশি আমাকে অভিশাপ দেয় দিক
এমনিতেই আস্বাদন বিমুখ আমি মরীচিকাময় মানুষ
গতানুগতিক কারো জীবনে তাই ফেলতে পারিনি প্রভাব

সেখানে বাঁধনহারা একটা ভাব, আমার মনগড়া ধারণা মাত্র
এখনও অজানায় যখন পরস্পরের শরীরে আলোর উপসর্গ
কীভাবে উৎসেচকের আঘাতে ভেঙে যায় বৈষয়িক বন্ধন

জানি আপাদমস্তক ছড়িয়ে পড়ার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়
তবু সাধনার উপর জমছে আমার একরাশ অভিযোগ
পছন্দ না হলেও যেমন অনেকের জন্য এখনও করছি নিরুপায় আয়োজন
কোনও ভাবে খুলে যায় যদি কপালের কল...

সবার জন্যই জরুরি এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া
সুবিধা পেয়ে হওয়া যায় যদি আরও নির্ভুল
হতে পারে অন্ধকারে আলো জ্বালার এটাও আমার একটা বদ্ধমূল ধারণা
যে কারণে প্রায় অসম্ভব উপড়ে ফেলা সম্পর্কের শেকড়—
এখানেই ফুরিয়ে যেতে বাধ্য করছে আমাকে সর্বশক্তি

অভিমান থেকে তাই ফাঁস করে দিচ্ছি, আমার এসব গোপন খবর
নিংড়ে নিয়ে জীবনের ধর্ম, যদি হতে পারি কারও প্রাণের বিপরীত

সক্রিয় যে কোনও মাধ্যম যখন সন্দেহের তালিকায় এখনও আমাকেই রেখেছে



দীর্ঘ ছায়ার জ্যামিতি

আলোর নীচের অন্ধকার আমাকে যদি উচ্চতা মেপে চিনতে চাও
তাহলে মনস্কামনা পূর্ণ করার আশায় বাঁধতে এসো না এ গাছে পাথর
ডুবিয়ে রাখো অক্ষর খাটানো শব্দের রঙিন সুদে
নিজেকে রাঙিয়ে চোখ যেমন সবসময় দেখার ভান করে !
তুমি তো জানো দৃষ্টিশক্তি শুধুমাত্র মনের দখলে থাকে
তবু পুষে রাখছ শিকার, তোমার কি সত্যিই আছে তাকে কাঁটা ছেঁড়া করার অধিকার
এখনও অবুঝ তুমি বুঝলে না জিভে থাকে না, স্বাদকোরক থাকে রক্তে
ফলত অবিশ্বাস করো এতদিন ধরে বিশ্বাস করা আমাকে
শুধু এড়িয়ে যেওনা, তৈরি করো আমার সঙ্গে অনন্ত বিচ্ছেদ

শ্মশান যখন আনকোরা আকর্ষণের শেষ আশ্রয়



ম্যানিয়া

পিচ্ছিল সুড়ঙ্গের ভাষায় কথা বলে এখন মায়াবী আঙ্গুল
মুঠো আলোয় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর—
সঞ্চয় থেকে ছেঁটে ফেলে তাই পরস্পরের যে টুকু যা বাড়তি
তবু মুখোমুখি গল্প গুজব করা আমাদের ভাবছে পুতুল
যদিও ফিকে হতে দিইনি কোনও কিছু...
এখনও আগ্রহ অটুট এদেহের জ্বালানী মধু
কথকতার আদলে মিশিয়ে রাখছে যা কিছু সব সবুজ
স্বরের তলায় তখনও তুমি তরল—
আমাকে পাত্র ভেবে যত পারো উচ্ছিষ্ট ঢালছ!

প্রকৃতির দান এসব, জানে অগাধ জন্মজল, তাও
ভয়পায় অনুসন্ধানে উঠে আসা গর্ভশূন্য অবস্থা দেখে
যেমন অস্থানে অযোগ্য বলে শুধু শুধু কৃপণ ভাবছ তুমি আমাকে
জানি আবহমান এই বেঁচে থাকা একান্ত নিজের
মুহূর্তে ডুব দিয়েও ভেসে উঠছি অলৌকিক ক্ষমতা বলে
বার্তাবাণ আছড়ে পড়ার আওয়াজ শুনে
তখনও সবার হাতে শক্ত করে ধরা অজ্ঞানতার ঢাল
শব্দ ঢুকতে না দিয়ে বুকে, ডেকে আনছে চিরস্থায়ী অসুখ

ধাপে ধাপে একদিন ঠিকিই বুঝবে, এত কিসের ফিকির এসব
গতানুগতিক আশ্রয়কে কেন মনে হয় শ্মশান
অতিথি হতে চাওয়া আদরের কাছে সর্বস্ব উজাড় করার পর
বুঝেছি যখন, বিরল মুক্তি মানে বিচ্ছেদ

মরিয়া মনবাহন তারপরও নিরুত্তর, তোমার পিছু পিছু ছুটছে...


1 comment:

  1. খুব ভালো লাগলো, বিকাশের কবিতা

    ReplyDelete