Wednesday 20 December 2017

ঈ শা নী ব সা ক




কবিতাগুচ্ছ
                         







অকৃতজ্ঞ

এক

একটা রঙ লেগে থাকা তুলির আঁচড়ে দেওয়ার শব্দ নিয়ে গল্প লেখা যায় কি? খোলা খবরের কাগজ না পড়েই ফেলে দেওয়ার মধ্যে কিছু কি আসে যায়? এই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারো ঠিক যা যা কাজ এখনো পড়ে আছে তুমি কি তার জন্য সময় দিতে পারবে? পারবে না কারণ কেউ কেউ অসম্পূর্ণ থাকতে যায়। অকৃতজ্ঞ হওয়ার একটা সম্যক শিল্প আছে।

দুই

সমসাময়িক কালের ইতিহাস কিংবা কাছের মানুষকে দূরে ঠেলে রাখার মধ্যে খালি ঘৃণা দেখছো কিন্তু বলতো এই এড়িয়ে যাওয়ার সময় কাছে আসার একটা আড়াল আছে। ঠিক লুকিয়ে পড়ার পূর্বে একটা নিশ্চয়তার আশা। জানাতে তো হবেই না ঠিক কিভাবে মুখ ফেরালে ও ওপাশে ছায়া দেখা যাবে তোমার। এখন জলের মধ্যে , আয়নার ওপারে একটা ঘিঞ্জি আবহ।সেখানে থরে থরে রাজমুকুট সাজিয়ে রাখা। সবাই শুধু পচ্ছন্দ করেই পরে নিতে চায়।

তিন

বেদনা নির্মিত নিরর্থক বিলাসিতার পায়ে ঘুঙুর পরাতে পরাতে মনে হয় ঠিকভাবে পিস্তল ধরার থেকে মৃতদেহ ছুঁয়ে থাকার নিয়ম বড় মধুর। নিজেকে একটা সম্পূর্ণ সুখ দিতে গেলে যে শরীরটা দেখতে পাও তাকে আটক করতে দূর বলে কারওর সাথে যুদ্ধ করতে হবে। রক্তচাপ বেড়ে গেলে ক্ষমতাহীন উদ্বাস্তুর সম্মোহনী আপ্যায়নে কিছু পুনর্বাসনের শান্তি মিলতে পারে। শান্তির জন্য যুদ্ধ হয় এটা বুঝলে নির্ভরতা কমে যাবে।অনেক দূরে থাকলেও একটা কথা জানি।ছদ্মবেশ জরাজীর্ণ ভাবে গলে যেতে পারে।মুখোশ কিন্তু তাকিয়ে থাকবে একটানা।তুমি চোখ মেলাতে পারবে ?


নীলকণ্ঠ


এক

অ্যালবাট্রসের নাম দিলাম রাজা। রাজা তো সে নয় যার পিছুটান আছে,যার মুক্তি নেই। হ্যাঁ অ্যালবাট্রসের নাম রাজা,সে একাধারে আকাশের কৃষক আবার রাজাও। তীব্র নীলজমির মধ্যে দিয়ে সে ফসল বুনে চলে।প্রত্যেক বার এতো পাহাড় বুনে দিতে দিতে সে শোনে শিশুদের আওয়াজ,"এই এতো মেঘ কেন বুনছো।আমরা যে নীল কে পাচ্ছি না।" আমার তো পাহাড় হওয়ার দায়। এর মধ্যে আমি সমস্ত খিদে লুকিয়ে রাখি। সেসব ছাড়িয়ে আমার ডানাকে বিকল প্লেনের মতো বাতিল করে নাবিক জয় প্রমাণ করে।তাতে আমার আনন্দ হয়। বন্দী হওয়ারও গর্ব আছে কারাগারের মধ্যে।

দুই

ঘরের মতো হয় একটা কবিতা। ভাবনাকে পিষে দিলে সে একলা হয়ে যায়। ঠিক যেভাবে আমার বাবার নাম আমি জানিনা, মা জানি একা। তেমন করেই তোমরা এসে বলো পাপের চিতায় যারা জ্বলে ওঠে তাদের কোনো সুগন্ধ নেই। ভরিয়ে দেব চন্দন আর ধূপকাঠি দিয়ে। দেখো আচ্ছন্ন করবো সমস্ত শরীর। মাছের গন্ধটুকু ছাড়া যে মাছটাকে খাও সেও পাপী সমান।মায়ের চোখে দেখি সেই বাদামি রঙের পথ।দেখি চলে যাওয়ার স্বপ্ন। একরাশ মৃত্যু যে কারওর অপেক্ষা হতে পারে তা শুধু জলাধার বলতে পারে।যে সমস্ত দরজারা আর খোলে না,বন্ধ হয় না তাদের ওপর ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে মা বলে এক দরজাহীন মুক্তি আছে। আমি বুঝি মা অপলক দৃষ্টিতে সামনে দেখে। পাপের ও স্বর্গে স্থান আছে।

তিন

মাটিতে ফাটল দেখলেই জানি তীব্রতা এক ভাস্কর্যের মতো নিপুণতা। সেই আদরটুকুর জন্য প্রবেশ করতে দিই তোমাকে আমার ঘরে। এই খোলা জানালা বন্ধ করতে হলে খড়খড়ি লাগাতে হবে।তারা একটা কবিতা পেয়ে যাবে,তোমাকে গোপন করবে। তবে এ আঁচড়টুকুর মোহ তুমি ছাড়তে পারবে না।নীলকন্ঠ বিষ ছাড়া ভালবাসতে পারে না।

চার

যুদ্ধের কামান যখন এসে পড়ে , ডাকাডাকি করে মানুষকে।তখন সমস্ত ঘর এক হয়ে বাড়ি হতে থাকে। জ্বলেপুড়ে যাওয়া চামড়া আটকে রাখে শেষ গ্রেনেডের খরচাখাতা। একটা পুরনো প্রেমের চিঠির মতোই সৈনিকের মূল্য। ধানের সারিরা এগিয়ে আসে যুদ্ধে। পেটভরানোর অর্থ যা থাকে সমস্ত শরীর বয়ে যোনিতে এসে জমে। আর একদিন এই সমস্ত পুরনো প্রেম রক্তাক্ত পোড়া পোস্টে পরিবার লিখে দেয়। সেখানে কিন্তু সেই অনিয়মিত যোনির অবদান লেখা থাকেনা।

শুদ্ধতা

এক

ঠিক করে কাঁটাচামচে বিঁধে ফেলা মাংসের টুকরো টা একটা যুদ্ধক্ষেত্র হতে পারে। প্লেটটা এসব বহুদিন দেখে কিন্তু রোজকার এই খাদ্যাভ্যাসের দৃশ্য সতত তার ক্ষুধার জ্বালা কে এড়াতে শিখিয়েছে। যতটা সম্ভব রাসায়নিক সারযুক্ত তারিখ লিখে যে খাবার সুসজ্জিত সুস্থতা নিয়ে বসে তাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় রক্তচাপের মাপ কত ? থ্রিলারের মত খাবার সরে যেতে যেতে মন্ডপে পড়ে থাকে পায়ের ছাপ , বসে থাকা মানুষের চাপে কুঁচকে যাওয়া চেয়ারের কাপড়। এসব একটু ঠিক করে নিলেই বুঝবে যে আর কেউ জানতে পারবে না এখানে পুজো হয়েছিল। একটা খুনের মত নিঁখুত উধাও হয়ে যাওয়াটা কার্যপ্রসাধনী।

দুই

যারা ঘরময় টেলিফোনকে অপেক্ষা করিয়ে বসিয়ে রেখেছে তাদের পুজোর সময় নেই। রাতদিন মনে রাখতেই হিমসিম হতে হতে একটা ফোন আসে এবং শেষটা ঠিক বিরক্ত কোরোনা মা ভারতে আসছি না এটা বলেই চুপ। আবার অপেক্ষা করতে করতে যে বেড়ালটাকে খাবার দিচ্ছেন ওনারা তারা জানেন যে পাশের বাড়িতে খাবার বলতে টকে যাওয়া ভাত। যেদিন আত্মহত্যার গল্প ঘরের মেঝেতে ভেসে আসলো সেদিন চেঁচিয়ে পাশের বাড়িতে বিড়ালটা চলে গেলেই ওরা খাবার দিলো ভালোই। ওদের সেদিন অনুষ্ঠান। চুপ করে খেতে খেতে বিড়ালটা তাকালো। মৃত্যুটা ও সাথে করে নিয়ে বসেছিলো।

তিন

পা থেকে প্রণাম চলে যাচ্ছে ছোটো ছোটো ছোঁয়ায়। আর না করতে করতে কোথায় না বলার আশাতেই বিজয়া করতে চলেছে কতজন। একটা ছোটো কবর থেকে যে নমাজ পাঠ হচ্ছে তাকে দেখতে দেখতে মনে হয় কেউ চলে যেতে চায় বলেই চিৎকার ফেরায়।শুদ্ধতা লুকিয়ে থাকছে বিষাদেই।



No comments:

Post a Comment