Monday 18 December 2017

কু ন্ত ল মু খো পা ধ্যা য়




গদ্য

কু ন্ত ল মু খো পা ধ্যা য় 

এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে




এক .
 কবির মৃত্যু হলে কী হয় ?
 কবির জন্ম হয় আর একটি প্রেমিক বিয়োগ হয়
 - প্রেমিক বিয়োগ হলে কী হয়
ভালবাসাবাসিতে কম পড়ে যায়
- এই ভালবাসা কী বিমূর্তের ?
 যে ভালবাসতে জানে , সে সব কিছুকেই ভালবাসতে পারে তাছাড়া মানুষও তো একটা বিষয় হ্যাঁ মানুষের শরীর আছে কিন্তু মন যে নিরাকার !
- কথা ?- কথা দিয়ে কি আসলে বিমূর্ততেই যাই না আমরা ? নৈশব্দকেই তো  উদ্ভাসিত করতে চাই কিন্তু পারি কি ?
 কেন বলছেন স্যর ?
 মানুষ আর একটা মানুষকে কিছু বোঝাতে পেরেছে ? এত কথা বলে সে কিছু বোঝাতে পেরেছে ?
তাহলে কীভাবে বোঝানো যায় ?
 না বলে
 না বলাটা কীভাবে বোঝানো যায় ? ইঙ্গিতে ?
 ভাষায় ... গানে ... কবিতায় ... ছবিতে ...
-আর একটু বলুন স্যর
বস্তুজগতের পৃথিবী নিরন্তর একটি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করছে নিজেকে
 কবির মৃত্যুর সঙ্গে এর সম্পর্ক কী ?
- কবিদের মাধ্যমে সেই ভাষা সঞ্চারিত হয় একজন কবির বিয়োগ মানেই সেই নিঃশব্দের তর্জনীটি খুঁজে পাওয়ার লোক আরও একটা কমে গেল
-কিন্তু কবির মৃত্যু হলেও এখন কি বৃহত্তর সমাজের কিছু আসে যায় ? মসজিদ মোড়ে সেই একই রকম দেখতে পাগলিনী কুঁচকে যাওয়া ব্লাউজ পরে হেঁটে যায় ,সে একইরকম ভুট্টাওয়ালা বীজের উপরে লেবু লাগায়
 কিন্তু একদিন তো ছিল গভীর যোগাযোগ !
 সে তো দেবতারাও বিয়ে করতে চাইতেন মানবীদের !  যাইহোক জীবন তো নিজের মত চলবেই ... কোনও মৃত্যুই তো জীবনের বিকল্প নয়
কিন্তু কবি তো কোনও সামান্য মানুষ নন , তিনি সময়ের আর সমাজের একটা সন্ধি-মুহূর্তে অবস্থান করেন তাহলে ?
তার কারন কবিরা প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন চিত্রকর সম্মন্ধে , গায়কের সম্মন্ধে , কবির সম্মন্ধে মানুষ বলে ওরা একটা অন্য জগতের মানুষ !
- তার মানে ,এখানেই কি বিচ্ছিন্ন করার কাজটি শুরু হল ? তাহলে কি জায়গাটা আস্তে আস্তে বৃত্তীভূত হয়ে যাচ্ছে স্যর ?
কীরকম ?
মানে যারা কবি তাঁরাই কবিতা বুঝবেন , কবিদের বুঝবেন , ছবি আঁকিয়েরাই শুধু বুঝবেন ছবি ...
কিন্তু গান ?
 গান নিয়ে কিন্তু আমার এই ভাবনা খাটে না 
- তার কারন গানের ভিতরে আছে সুর
 কিন্তু যে গান বুদ্ধিদীপ্ত ? সে গান সম্মন্ধে কী বলা যায় ?
 তার শ্রোতা কিন্তু কম কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে বলছি , স্রষ্টারাই শধু সৃষ্টির দিকে যাবেন , আর সেসব বুঝবেন , এমন ব্যাখাও কি ঠিক হল স্যর ?
 কিছুই ঠিক নয় , আবার বেঠিকও নয়
তাহলে আমরা এতক্ষণ কী বললাম ? কী ভাবলাম আর আলোচনা করলাম ?
 অনেকটা কি এইরকম   
এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে , জানি না সে এইখানে শুয়ে আছে কীনা  
দুই .

ভাই কতদূরে তোমার বাড়ি ?
সমুদ্রের , জলের ভিতরে
ভাই তুমি কী ভালোবাসো ?
 স্থির আর টলটলে জলের মধ্যে ঘুঙুরের বল খুলে ফেলতে
 কোথায় যেতে চাও ?
- কোনও অবন্ধনা চুলের মধ্যে মাছ হয়ে যেতে
তারপর ?
সোহাগের ভিতরে তার নাকে মুখে ঢুকে পড়তে চাই
 তোমার নাম ?
লাটিম
 সুতো আছে ? তাকে ছেড়ে দিতে পারো ?
- হাওয়ায় ? হ্যাঁ পারি তো
ঊড়িয়ে নিয়ে যেতে পারো ?
 আমি ঊড়ে যেতে পারি ঘুরে যেতে পারি , এই পৃথিবীর মতো
না না আমি বলব সেই বাচ্চা  মেয়েটির মতো , যে নাচ করতে চায় কিন্তু ঘুরে ঘুরে যায় , পারে না আমি লাটিম মনের ভিতরে ঢুকে যাই ... 
কার ? অবন্ধনার ?
হ্যাঁ আর চুলের সঙ্গে ডাই লাগিয়ে দিই ... সে সকালবেলা গভীর  জলের মধ্যে উঠে দেখে তার চুল শ্যাওলার মতো ...
আর পাখনা , আঁশ কোথায় পাও ? তোমার পেশা কী ,লাটিম ?
 আমি আসলে থিয়েটারের মেক-আপ বয় ; মারমেড বানাই , নেবে ?  

তিন .
- কেমন লাগল ?
- কী বলব ? ভালো বললে আপনি বলবেন এড়িয়ে যাওয়া হল , কিন্তু একটা ব্যাপার বলব স্যর ? আপনি কি মণীন্দ্র গুপ্তের কবিতাটা গদ্যে লিখে দিলেন ?
কবিতাটা বের করি তাহলে ...
জলে নামার আগে যে চুল খোঁপায় বাঁধা ছিল
তা এখন খুলে গেছে
কে খুলে দিল ? জলেরা ? মাছেরা ? নাকি মৃত্যু নিজে ?
অবন্ধনার চুল এখন ঘুমিয়ে পড়বে
জল , মাছ , মৃত্যু যেই হও নাক মুখের মধ্য দিয়ে
ওর ভিতরে ঢোকো
ভিতরে কুলকুল করে জলতরঙ্গ বাজাও , খেলা করো
যতক্ষণ জেগে আছে ওকে হাসাও , আদর করো
-মনে হয় না  মোৎসার্টের পিয়ানো -সিম্ফনি বাজছে ? লোয়ার অকটেভ থেকে আপার অকটেভ ? মনে হয় না অজস্র আঙুল যেন ঢুকে পরছে বালির ভিতরে , বিলি কেটে দিচ্ছে চুল ? কবিতাটা নিয়ে বলতে গিয়ে কি নষ্ট করে ফেললাম একে ?
 না না স্যর তবে এই কবিতাটার বাড়ি কোথায় ?
- অচেতনে , গভীর জলের মধ্যে , টলমলে যে চুল কোমর পর্যন্ত এসে ...
এসে ?
 তলোয়ার আর রৌদ্রের ভিতরে চলে গেছে ...
কে লিখেছে ?
 যেই লিখুক কিন্তু এর মধ্যে কি পাস্তেরাল  অ্যালেগ্রা শুনতে পাচ্ছেন স্যর ?

চার .

প্রথমে কী ছিল ?
হাওয়া
তারপর ?
 মাটি
তারপর একটা গাছ পোঁতা হল , বৃষ্টি এলো , মেঘ , গাছের চারিদিকে জল ...
 এরপর অনেক কিছু ... অনেক দিন আর রাত্রিবেলা ভেসে গেল আর নোয়ার নৌকার মতো তৈরি হলো নারী ... দীর্ঘ একটা দীঘি ...সময়ে সেই দিঘিটির জল ছাপিয়ে হলো বরফের একটা সরোবর
আর সেটা অনেক নদীর উৎস , তার নীচে বরফের পাতলা চাদর ঢাকা নিয়ে শুয়ে আছি আমি
একটা মেয়ের ভিতরে ?
হ্যাঁ জন্ম নেব বলে শুনছি সরোবরকে গল্প বলছে হাওয়া ...এই পৃথিবী আর আমার জন্মের কাহিনী ...
প্রথমে কী ছিল ?
 অন্ধকার শূন্যতা
 শূন্যতা দিয়ে ঢাকা  ছিল আলো ? হ্যাঁ , তারপর আলো- আলো মাথা মাথার ভিতরে আমি ... চোখ ...খুললাম
-কি দেখলে ?
 দেখলাম অজস্র দাঁত
 আর কী দেখলে ?
 দেখলাম ভয় , কে যেন আঘাত করল আমায়
 তাহলে প্রথমে কী ছিল ?
একটা আইডিয়া
তারপর ?
 তারপর একটা গাছ ...এইভাবে আলো , বেবি আলো ...নিভে গেলে হাততালি
 তুমি আসলে কে ?
 আমি স্ক্রিপ্ট রাইটারের অ্যাসিট্যান্ট
কী লিখছ ?
 রুটি
 আমার মাসাধিক কাল ঋতুর রক্ত নেই , জানো ?
তুমি কি জন্ম-সম্ভবা ?
না , মেনোপজ
তুমি কি হাসতে ভুলে গেছ ?
- একদিন পুরুষই ছিল আমার হাসি আর আনন্দের উৎসমুখ
 প্রথমে কী ছিল তাহলে ?
 একটা বিশাল হলঘর , যেখানে আমরা গমগম করছিলাম
তারপর  অন্ধকারে , হাসির ভিতরে আমরা একে অপরের নাম জানতে চাইলাম
 তোমার নাম কী ?
- আমার নাম স্বাতী জন্ম নেব বলে ভালবেসেছিলাম
 - তারপর ? তারপর ঢেউ , বিদ্যুৎগর্ভ মেঘ
মেঘের ভিতরে কী দেখলে ?
 দেখলাম ধোঁয়া আগুন আর বিশাল গর্ত চারিদিকে ... মানুষ মাটি দিচ্ছে
আর কী দেখলে ?
দেখলাম  একটা ছবির মতো  জায়গা ; যার নীচে বহমান  নদী
 জন্নত ?
 দেখলাম  জয়দেব বসু হেঁটে যাচ্ছেন লেনিনের সঙ্গে গল্প করতে করতে
 আর ?
দেখলাম হুর নিয়ে বসে আছেন কবিরুল ইসলাম
 আর কী দেখলে ?
দেখলাম একটা কাব্যগ্রন্থ যার উপড়ে শুয়ে আছেন  মল্লিকা সেনগুপ্ত
 এঁরা সবাই মারা গেছেন ?
কেউ কখনও মারা যায় না তো !
 বিচ্ছেদও হয় না কি ?
 পৃথিবীতে কারও সঙ্গে কোনও বিচ্ছেদ নেই
 কীভাবে ?
 যেকোনো মানুষই আর একটা মানুষের কাছে একটা আইডিয়া ... আর আইডিয়া মস্তিস্কে থেকে যায় চিরদিন ... এক স্মৃতি থেকে আরও এক স্মৃতির ভিতরে প্রবাহিত হয় আইডিয়ার মৃত্যু নেই
অরুন্ধতী , তুমি নক্ষত্র ? তুমি মারা গেছ ? সুপারনোভায় ?
 না , আমি বেশ্যাদের নিয়ে কাজ করি
প্রথমে কী ছিলে তাহলে ?
 ছিলাম একটা গাছ , একটা নদী , ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল একটা সাইকেল , দূরে বসেছিল মিকি , আমাদের মিকি মাউস
যাকে তোমরা আদর করে বাল্মীকি বলো ?
 হ্যাঁ , আর ছিল ক্রৌঞ্চ ক্রৌঞ্চী
তারপর ?
জন্ম হল বেদনার   


No comments:

Post a Comment